ঢাকা ১১:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অধিকাংশ সুপারিশ উপেক্ষিত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮
  • ২৭৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গতকাল দশম জাতীয় সংসদের চার বছর পূর্ণ হয়েছে। এ চার বছরে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে, তার প্রায় ৯০ ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত চার বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ১ হাজার ৬৫৬টি সুপারিশ করলেও বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২২১টি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, এ সরকারের আমলে ৩৮টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সম্পর্কিত আরও ১০টিসহ মোট ৪৮টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা, বেসিক ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ঋণখেলাপিদের তালিকা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে সুপারিশ করা হলেও অধিকাংশ সুপারিশ এখন পর্যন্ত ফাইলবন্দি অবস্থায় রয়ে গেছে।

সংসদীয় কমিটিগুলোর বৈঠক খাতে প্রতি বছর ব্যয় হয় ৫ কোটি টাকারও বেশি। প্রশ্ন হল, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশগুলো যদি আমলেই নেয়া না হয়, তাহলে এ ধরনের নামসর্বস্ব কমিটি গঠন করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ অপচয় করা হচ্ছে কেন?

অভিযোগ রয়েছে, সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে খোদ সরকারেরই কোনো আগ্রহ নেই। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আইন-২০১১ নামে এ সংক্রান্ত একটি বিলের খসড়া তৈরি করে রেখেছে, যা নবম জাতীয় সংসদেই পাস হওয়ার কথা ছিল।

অথচ এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে দশম সংসদের মেয়াদকালে এ বিল আদৌ পাস হবে কিনা, তা একরকম অনিশ্চিত। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিলটি পাস হলে কমিটি যাকে তলব করবে, বৈঠকে তার হাজির থাকা বাধ্যতামূলক। হাজির না হলে সংসদ অবমাননাসহ তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি এবং শাস্তির সুপারিশ করতে পারবে সংসদীয় কমিটি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিলটি পাসের মধ্য দিয়ে সংসদীয় কমিটিগুলো শক্তিশালী হলে দুর্নীতি কমবে এবং মন্ত্রণালয়গুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব, জনস্বার্থে এ বিল পাস হওয়া উচিত।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ‘ছায়া মন্ত্রণালয়’ হিসেবে পরিচিত। অথচ কমিটির সুপারিশগুলো কেবল কার্যপ্রণালীবিধির আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, সংসদীয় কমিটিগুলো সার্বভৌম সংসদেরই অংশ। কোনো বিষয়ে কমিটির সুপারিশ মানে একধরনের নির্দেশ।

এ নির্দেশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। মন্ত্রণালয়গুলো সংসদীয় কমিটির অধিকাংশ সুপারিশ উপেক্ষা করে বা আমলে না নিয়ে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ প্রবণতা থেকে বের হওয়া জরুরি বলে মনে করি আমরা।

বস্তুত কাগজে-কলমে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বহাল থাকলেও বাস্তবে তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সংসদ চলছে শক্তিশালী বিরোধী দলবিহীন অবস্থায়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বলীয়ান সরকার তার নিজস্ব স্টাইলে চলছে বললে অত্যুক্তি হবে না।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে এর অবসান জরুরি। এজন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোকে কার্যকর ও শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অধিকাংশ সুপারিশ উপেক্ষিত

আপডেট টাইম : ০৩:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গতকাল দশম জাতীয় সংসদের চার বছর পূর্ণ হয়েছে। এ চার বছরে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যেসব সুপারিশ করেছে, তার প্রায় ৯০ ভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গত চার বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত ১ হাজার ৬৫৬টি সুপারিশ করলেও বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২২১টি।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, এ সরকারের আমলে ৩৮টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সংসদ সম্পর্কিত আরও ১০টিসহ মোট ৪৮টি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমের নামে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা, বেসিক ব্যাংক লুটপাটের মূল হোতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ঋণখেলাপিদের তালিকা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যুতে সুপারিশ করা হলেও অধিকাংশ সুপারিশ এখন পর্যন্ত ফাইলবন্দি অবস্থায় রয়ে গেছে।

সংসদীয় কমিটিগুলোর বৈঠক খাতে প্রতি বছর ব্যয় হয় ৫ কোটি টাকারও বেশি। প্রশ্ন হল, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশগুলো যদি আমলেই নেয়া না হয়, তাহলে এ ধরনের নামসর্বস্ব কমিটি গঠন করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ অপচয় করা হচ্ছে কেন?

অভিযোগ রয়েছে, সংসদীয় কমিটির ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে খোদ সরকারেরই কোনো আগ্রহ নেই। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় সংসদের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি আইন-২০১১ নামে এ সংক্রান্ত একটি বিলের খসড়া তৈরি করে রেখেছে, যা নবম জাতীয় সংসদেই পাস হওয়ার কথা ছিল।

অথচ এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে দশম সংসদের মেয়াদকালে এ বিল আদৌ পাস হবে কিনা, তা একরকম অনিশ্চিত। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ক্ষমতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত বিলটি পাস হলে কমিটি যাকে তলব করবে, বৈঠকে তার হাজির থাকা বাধ্যতামূলক। হাজির না হলে সংসদ অবমাননাসহ তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি এবং শাস্তির সুপারিশ করতে পারবে সংসদীয় কমিটি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিলটি পাসের মধ্য দিয়ে সংসদীয় কমিটিগুলো শক্তিশালী হলে দুর্নীতি কমবে এবং মন্ত্রণালয়গুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব, জনস্বার্থে এ বিল পাস হওয়া উচিত।

সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ‘ছায়া মন্ত্রণালয়’ হিসেবে পরিচিত। অথচ কমিটির সুপারিশগুলো কেবল কার্যপ্রণালীবিধির আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, সংসদীয় কমিটিগুলো সার্বভৌম সংসদেরই অংশ। কোনো বিষয়ে কমিটির সুপারিশ মানে একধরনের নির্দেশ।

এ নির্দেশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া উচিত। মন্ত্রণালয়গুলো সংসদীয় কমিটির অধিকাংশ সুপারিশ উপেক্ষা করে বা আমলে না নিয়ে একটি খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ প্রবণতা থেকে বের হওয়া জরুরি বলে মনে করি আমরা।

বস্তুত কাগজে-কলমে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বহাল থাকলেও বাস্তবে তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। সংসদ চলছে শক্তিশালী বিরোধী দলবিহীন অবস্থায়। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার বলে বলীয়ান সরকার তার নিজস্ব স্টাইলে চলছে বললে অত্যুক্তি হবে না।

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে এর অবসান জরুরি। এজন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোকে কার্যকর ও শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।